দিল্লি নাকি দুবাই শেখ হাসিনা?

দিল্লি নাকি দুবাই শেখ হাসিনা?



ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে যে খবর রটেছে, তা নিয়ে নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা ছাড়ার পর থেকেই তার অবস্থান নিয়ে একাধিক জল্পনা-কল্পনা চলছে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, শেখ হাসিনা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অবস্থান করছেন। তবে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে, তিনি নয়াদিল্লি থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই চলে গেছেন। 

**শেখ হাসিনার দিল্লি থেকে দুবাই যাওয়া নিয়ে গুঞ্জন**

শেখ হাসিনার দুবাই যাওয়ার কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা চলছে। গতকাল অন্তর্বর্তী সরকারের এক উপদেষ্টাও জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরকারের কাছে নেই। তিনি বলেন, “আমরা দিল্লি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেও খোঁজ নিয়েছি, তবে এ বিষয়ে কেউ নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি। তিনি (শেখ হাসিনা) আজমানে গেছেন বলে যেসব খবর শোনা যাচ্ছে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হলেও কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।”

**শেখ হাসিনার ভারতে পালানোর বিবরণ**

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং জনরোষ থেকে বাঁচতে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট গণভবন থেকে ভারতে পালিয়ে যান। তিনি হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে বিমানবন্দরে পৌঁছে, সেখান থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর সামরিক উড়োজাহাজে দিল্লির কাছে গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেন। তার সঙ্গে ছিলেন তার ছোট বোন শেখ রেহানা। ভারতে পৌঁছানোর পর তাকে হিন্দন বিমানঘাঁটির একটি সেফ হাউসে রাখা হয় প্রায় দুই সপ্তাহ।

 **সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া খবর**

সামাজিক মাধ্যমে সম্প্রতি দাবি করা হয়, শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমান শহরে চলে গেছেন। সেখানে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের বাসায় তিনি আশ্রয় নিয়েছেন বলে খবর রটেছে। এ নিয়ে শামীম ওসমানকে দুবাইয়ের একটি শপিং মলে দেখা যাওয়ার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যা গুজবকে আরও উসকে দিয়েছে।

**সরকারের প্রতিক্রিয়া**

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “শেখ হাসিনার অবস্থান নিয়ে নিশ্চিত তথ্য আমাদের হাতে নেই। দিল্লি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে খোঁজ নিয়েও কোনো তথ্য মেলেনি।” 

এদিকে, সামাজিক মাধ্যমে আরও দাবি করা হয় যে, আমেরিকার চাপের মুখে ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠিয়েছে। তবে এই দাবির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি। 

 **ভারতে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের অবস্থা**

ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনার মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যরা অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। তারা ট্রাভেল পাসের জন্য আবেদন করছেন, তবে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশে ফেরার জন্য ট্রাভেল পাস ইস্যু করা যেতে পারে, কিন্তু অন্য দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে।

 **শেখ হাসিনার পরিবারের বক্তব্য**

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে জানিয়েছেন যে, তার মা ভারত ছেড়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত বা অন্য কোনো দেশে যাননি। তিনি এখনো ভারতে অবস্থান করছেন বলে জয় দাবি করেন।

 **ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়া**

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর পার্লামেন্টে দেওয়া বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন যে, সংক্ষিপ্ত নোটিসে শেখ হাসিনাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়ালও বলেছেন, শেখ হাসিনার অবস্থান বা তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ভারতের কাছে কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই।

গত দুই মাসে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রায় দেড় শতাধিক হত্যামামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করার কথা উঠেছে। দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার আলোচনা চলছে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও বলেছেন, "শেখ হাসিনা যদি অপরাধ করে থাকেন, তাহলে তাকে বিচারকের মুখোমুখি করা উচিত।"

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এখনো দিল্লিতেই অবস্থান করছেন এবং তাকে নিয়ে ছড়িয়ে পড়া খবরগুলো ভিত্তিহীন। দিল্লির সাউথ ব্লকের এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ভারতের সম্মানিত অতিথি হিসেবে অবস্থান করছেন এবং যদি তিনি তৃতীয় কোনো দেশে যান, তাতেও কোনো লুকোছাপার প্রয়োজন নেই।

Post a Comment

0 Comments