বেকারদের থেকেই বিপুল আয়

বেকারদের থেকেই বিপুল আয়



সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করতে গিয়ে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বেকার তরুণদের, যা অনেকের জন্যই বড় এক বোঝা। প্রতি বছর কয়েক হাজার টাকা শুধু আবেদন ফি জোগাড় করতে খরচ হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই টিউশনির মাধ্যমে নিজের খরচ চালান এবং এমনকি কখনও কখনও খাবারও মিস করতে বাধ্য হন, শুধুমাত্র এই ফি জোগাড় করতে। অনেক বেকার অর্থের অভাবে পছন্দের চাকরিতে আবেদন করতে পারছেন না। যেখানে বিশ্বের অনেক দেশ বেকারদের ভাতা দিয়ে সহায়তা করে, সেখানে বাংলাদেশে বেকারদের কাছ থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা আয় করছে সরকার।

সরকারি চাকরির আবেদন ফি নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু আবেদন ফির নামেই বেকারদের কাছ থেকে প্রতি বছর কয়েক শ কোটি টাকার বেশি আয় করা হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ২৬ লাখ বেকার রয়েছে, যার মধ্যে ২১ লাখ তরুণ এবং ৮ লাখ উচ্চশিক্ষিত বেকার। এদের মধ্যে অনেকেই চাকরি পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছেন। যেমন, ৪৬তম বিসিএস পরীক্ষায় ১,১৪০টি পদের বিপরীতে ৩ লাখ ৩৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে, যেখানে সরকারের আয় হয়েছে প্রায় ২৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

**আবেদন ফি জোগাড়ে দুর্ভোগ**

ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক শেষ করা সিরাজগঞ্জের মুক্তার হোসেন এর উদাহরণ উল্লেখযোগ্য। তিনি ঢাকায় মেসে থেকে টিউশনি করে চলার চেষ্টা করছেন এবং পাশাপাশি চাকরির জন্য হন্যে হয়ে চেষ্টা করছেন। তবে অর্থাভাবে অনেক চাকরিতে আবেদন করতে পারছেন না। মেট্রোরেলের টিকিট মেশিন অপারেটর পদের জন্য ১,০০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট জোগাড় করতে না পারায় তিনি ওই চাকরিতে আবেদন করতে পারেননি। একই সমস্যায় পড়েছেন নাজমুলসহ আরও অনেক শিক্ষার্থী।

 **অভিযোগ ও সমালোচনা**

বেশিরভাগ চাকরিপ্রার্থী অভিযোগ করছেন, তারা অর্থের অভাবে অনেক চাকরির সুযোগ হারাচ্ছেন। কোচিং সেন্টারের শিক্ষক মো. বশির আহম্মেদ জানান, তার অনেক শিক্ষার্থী খাবার না খেয়ে দিন পার করে দেয় শুধু টাকা বাঁচানোর জন্য। বিশেষত, যেসব চাকরির আবেদন ফি ৫০০-১,০০০ টাকা বা তার বেশি, সেগুলোর জন্য অনেককে বেশ কষ্ট করে অর্থ জোগাড় করতে হয়।

 **সরকারি চাকরির ফি ও নিয়মনীতি**

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে সরকারি চাকরিতে আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয় গ্রেড অনুযায়ী। যেমন, ৯ম গ্রেডে আবেদন ফি ৬০০ টাকা, ১০ম গ্রেডে ৫০০ টাকা এবং ১৭-২০তম গ্রেডে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া, বিসিএস পরীক্ষার জন্য আবেদন ফি ৭০০ টাকা নির্ধারিত আছে। সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে এত বেশি ফি নির্ধারণ করা, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের পরিবারের চাকরিপ্রার্থীদের জন্য এটি এক বিশাল বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

**ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা**

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করা এক শিক্ষক জানান, তিনি নিজেও সরকারি চাকরির জন্য আবেদন করছেন। তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতে আবেদন করতে গিয়ে মাসে ৩-৪ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। গত দুই বছরে আবেদন ফি ও পরীক্ষার খরচেই ৮০-৯০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে তার। আবেদন ফি ছাড়াও অনেক সময় একদিনে কয়েকটি পরীক্ষা পড়ে যায়, যার মধ্যে একটিতে অংশ নিতে পারলেও বাকি পরীক্ষাগুলোতে অংশ নেওয়া সম্ভব হয় না।

**সরকারের আয় ও বেকারদের কষ্ট**

সরকারি চাকরির আবেদন ফি নিয়ে অনেকেই মনে করছেন, সরকার বেকারত্বকে পুঁজি করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভাগ নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বড় অঙ্কের ফি নিচ্ছে, কিন্তু চাকরি পেতে বারবার আবেদন করেও ফল আসছে না। এর মধ্যে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনাও দেখা গেছে, যা চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে হতাশা বাড়িয়েছে।

 **সমাধানের দাবি**

চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন ফি কমানোর দাবি জানাচ্ছেন এবং সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার জন্য আন্দোলন করছেন।

Post a Comment

0 Comments