পুলিশের ওপর আস্থা এখনো সংকটে, চ্যালেঞ্জের মুখে প্রত্যাশা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পেরিয়েছে। তবুও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরোপুরি স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি। যদিও তিন মাসে কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে, তবে পুলিশের ওপর মানুষের আস্থা এখনো ফেরেনি। এদিকে নাগরিকদের প্রত্যাশাও বহুগুণ বেড়েছে।
অনিশ্চয়তা ও মনোবল সংকট
পুলিশের একাংশ এখনো অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। নতুন পদায়নে মাঠপর্যায়ের অনেকে নতুন পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেননি। ঢাকার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশের অধিকাংশ সদস্য নতুন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “ঢাকার প্রায় সব পুলিশ পরিবর্তন করা হয়েছে। তাদের অলিগলি চিনতে এবং গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক গড়তে সময় লাগবে।”
অন্যদিকে, বিগত সরকারের আমলে যাঁরা পদবঞ্চিত ছিলেন, তাঁদেরই অনেকে এখন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। তাঁদের দীর্ঘদিন 'অপারেশনাল' কার্যক্রম থেকে দূরে রাখা হয়েছিল, যা এখন পুলিশের দক্ষতায় প্রভাব ফেলছে।
মানুষের আস্থার সংকট
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে পুলিশকে দলীয় কাজে ব্যবহারের অভিযোগ ছিল। ফলে জনগণের আস্থা সংকটে রয়েছে। পুলিশি কার্যক্রমে গতি আনতে এই আস্থাহীনতাকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশকে আবারও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত করতে নেতৃত্বের ঘাটতি রয়েছে।
অপরাধ বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে। যান চলাচল শৃঙ্খলায় আনতে ট্রাফিক পুলিশের নির্দেশনা অমান্য করার প্রবণতা বাড়ছে। মামলা ও জরিমানা করেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
বিপর্যস্ত অবস্থা ও পুনর্গঠন
অভ্যুত্থানকালে দেশের ১১৪টি থানা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৪৬০টি স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি ৫,৭৪৯টি অস্ত্র ও ৬.৫ লাখের বেশি গোলাবারুদ হারিয়ে যায়। পুলিশের কার্যক্রম চালাতে এখনো নানা প্রতিকূলতা রয়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ইনামুল হক সাগর বলেন, "সদস্যদের মনোবল ফেরাতে এবং কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে নতুন নেতৃত্ব প্রদান, সরঞ্জাম মেরামত ও ক্রয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।"
সশস্ত্র বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা
অন্তর্বর্তীকালীন সময় থেকে এখনো সেনাবাহিনী, বিজিবি ও আনসার পুলিশকে সহযোগিতা করছে। সশস্ত্র বাহিনী ইতোমধ্যে ৬ হাজারের বেশি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।
র্যাবের বিশেষ উদ্যোগ
র্যাব ছিনতাই ও ডাকাতি দমনে তৎপর। তারা যৌথ বাহিনীর সঙ্গে আড়াই হাজারের বেশি অভিযান পরিচালনা করেছে। র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, "জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।"
ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
কর্মপরিবেশে সংকট, অপরাধ দমন, এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দক্ষ নেতৃত্ব ও সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতি উন্নয়ন সম্ভব।
0 Comments