আল-জাজিরার প্রতিবেদন: আমি ছুটছি, যেন এক ফেরারি যার সামনে কোনো ভবিষ্যৎ নেই: ছাত্রলীগ নেতা

 আল-জাজিরার প্রতিবেদন:

আমি ছুটছি, যেন এক ফেরারি যার সামনে কোনো ভবিষ্যৎ নেই: ছাত্রলীগ নেতা

আজ রোববার কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা ছাত্রলীগের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেটি করেছেন মেহেদী হাসান মারুফ। কিছুটা সংক্ষেপিত আকারে প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হলো।

ঢাকা, বাংলাদেশ
আপডেট: অক্টোবর ২৭, ২০২৪ | ১৭:৩৬

২৪ বছর বয়সী ফাহমি (ছদ্মনাম) আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রভাবশালী এক ছাত্র ছিলেন, কিন্তু আগস্ট মাসের শুরু থেকে তিনি আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফাহমি ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন, যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন। ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল, তবে আগস্টে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে এই সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়। শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নেন।

গত সপ্তাহে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্রলীগকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে চিহ্নিত করে এবং নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

ছাত্রলীগের নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ:
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ছাত্রলীগের ওপর ১৫ বছরের সহিংসতা, হয়রানি, এবং নিজেদের স্বার্থে জনসম্পদ ব্যবহারসহ গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ রয়েছে।

ফাহমি, একজন ফলিত রসায়নের ছাত্র, জানান, “কিছুদিন আগেও আমি এই ক্যাম্পাসের নেতৃত্ব দিচ্ছিলাম। আজ আমি ছুটছি, যেন কোনো ভবিষ্যৎ নেই।” তার এই অভিজ্ঞতা হাজারো শিক্ষার্থীর বর্তমান অবস্থার প্রতিফলন, যারা একসময় ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিল, কিন্তু এখন তাদের অবস্থা সংকটাপন্ন।

অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি:
আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত এসব ছাত্রদের অবস্থান এখন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, এবং তারা উচ্ছেদ, প্রতিশোধ, এমনকি কারাবাসের হুমকির মুখোমুখি। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সময় গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের ফলে তাদের এই দশা হয়েছে।

ফাহমির ভাষ্যমতে:
ফাহমি জানান, তিনি সরকারবিরোধী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেননি, তবে তার বোনেরা অংশ নিয়েছিল। তিনি মনে করতেন তাদের দাবি সঠিক, তবে দলীয় নিয়মের কারণে তার হাতে বাধা ছিল।

সহিংস আন্দোলনের পটভূমি:
সরকারি চাকরির কোটাব্যবস্থার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষাপটে জুলাই মাসে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। পরে আন্দোলনটি ব্যাপক আকার ধারণ করে এবং শেখ হাসিনার শাসন উৎখাতের দাবিতে পরিণত হয়।

অবশেষে, পাঁচ আগস্ট সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা শেখ হাসিনার বাসভবন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আক্রমণ চালায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামরিক হেলিকপ্টারে করে দেশত্যাগ করেন এবং নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নেন।

সহিংসতার রেশ:
হাসিনার পদচ্যুতি ঘটলেও সহিংসতা অব্যাহত থাকে। আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এবং ছাত্রলীগের কর্মীরা বিদ্বেষের মুখে পড়েন, অনেকে আত্মগোপনে চলে যান বা পালানোর চেষ্টা করেন।

ফাহমির পরিবারের হুমকি:
ফাহমির পরিবার, বিশেষ করে তার ছোট ভাই, এ ধরনের প্রতিশোধমূলক সহিংসতার শিকার হয়েছে। নোয়াখালীতে তার বাড়ি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আক্রমণের শিকার হয়েছে।

ফাহমি বলেন, “আমি কখনও রাজনীতিতে তেমন মনোযোগ দিইনি। তবে ঢাকার হলগুলোতে ছাত্র রাজনীতি এড়ানোও সহজ নয়।”

তার বাবা দুই বছর আগে মারা যান, এবং তখন থেকেই পরিবারের দায়িত্ব তার ওপর। ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় তার সরকারি চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়লেও, এই আনুগত্যের মাশুল তাকে দিতে হচ্ছে।

২০২২ সালে তার বাবার মৃত্যু হলেও, মাত্র একদিন পর শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাকে ঢাকা যেতে হয়েছিল, যেখানে তিনি পরিবারকে নোয়াখালীতে রেখে যোগ দিয়েছিলেন।

Post a Comment

0 Comments