রাস্তাঘাটে আগের মতো পুলিশের তৎপরতা নেই। টহল ও তল্লাশি কার্যক্রমও কমে গেছে। থানায় গেলে মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা সম্ভব হলেও বেশিরভাগ ঘটনায় আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। পুলিশকে কাজে ফেরানোর জন্য তেমন কোনো উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পতনের দেড় মাস পরও থানাগুলোর কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়নি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অধীনে ৫০টি থানা রয়েছে। ডিএমপি সূত্র জানায়, ৫ ও ৬ আগস্ট ২১টি থানাসহ পুলিশের ২১৬টি স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ১৩টি থানা আগুনে পুড়ে যায়। এছাড়া পুলিশের অনেক টহল গাড়িও পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্ত থানা ভবনগুলোর মেরামতকাজ চলছে। ভাটারা, যাত্রাবাড়ী ও মিরপুর মডেল থানার ভবনগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ভবনে এখন কাজ করার মতো পরিস্থিতি নেই। তাই এই তিন থানার কার্যক্রম চলছে অন্য জায়গায় অস্থায়ী কার্যালয় থেকে।
ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে জানান, অস্থায়ী কার্যালয়ে বসে মামলা ও জিডি নেওয়া গেলেও গাড়ি না থাকলে পুলিশ টহল ও তল্লাশি কার্যক্রম কীভাবে জোরদার করা সম্ভব? যতদিন রাস্তায় পুলিশের উপস্থিতি না বাড়বে, ততদিন পুলিশি ব্যবস্থাও স্বাভাবিক হবে না।
কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের সক্রিয় করার পরিবর্তে বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বেশি ব্যস্ত রয়েছেন বদলি ও পদোন্নতি নিয়ে। এ কারণেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় লাগছে।
সজীব হোসেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। প্রতিষ্ঠানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে যাওয়ায় গতকাল বুধবার সকালে ঢাকার নতুন বাজার এলাকায় ভাটারা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ভাটারা থানার কার্যক্রম এখন গুলশানে চলছে।
গুলশানের আজাদ মসজিদের পাশের একটি পুরনো ভবনে একসময় গুলশান থানার কার্যক্রম ছিল। পরে গুলশান থানার জন্য নতুন ভবন তৈরি করা হয়, তবে বর্তমানে এর কার্যক্রম গুলশান-২ এলাকার আরেকটি ভবনে চলছে।
নিজের জিডির বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে সজীব বলেন, "আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ডিএমপি কমিশনারসহ শীর্ষস্থানীয় সব পদে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। থানার ওসি থেকে শুরু করে কনস্টেবল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে সবাইকে বদলি করা হচ্ছে। তবে কনস্টেবল থেকে ডিআইজি পর্যন্ত ২৬ সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি।" ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ডিএমপিতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কোনো পুলিশ সদস্যকে রাখা হবে না।
ডিএমপির কর্মকর্তারা জানান, ডিএমপি পুলিশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট, যেখানে প্রায় ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করতেন। সাধারণত সবচেয়ে দক্ষ কর্মকর্তাদেরই ডিএমপিতে পদায়ন করা হয়। তবে আগের সরকারের আমলে দক্ষতার চেয়ে দলীয় আনুগত্য, শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগে সক্রিয়তা এবং গোপালগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জের কর্মকর্তাদের ডিএমপিতে বেশি নিয়োগ দেওয়া হতো। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ডিএমপির অধিকাংশ বড় পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, অনেক থানায় এমন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাঁদের ওসি হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা নেই। ফলে বড় কোনো আন্দোলন মোকাবিলায় তাঁদের কার্যকর ভূমিকা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করার কারণে জনগণ ও পুলিশ মুখোমুখি অবস্থানে চলে এসেছে। পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় করতে হলে দলীয় বিবেচনার বাইরে পেশাদার কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।
গতকাল দুপুরে ভাটারা থানায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনের ভেতর থেকে ময়লার স্তূপ পরিষ্কার করছেন সিটি করপোরেশনের কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। মূল ফটকের সামনে কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁরা জানান, অনেকেই জানেন না যে ভাটারা থানার কার্যক্রম এখন গুলশানে চলছে। কেউ ভুল করে এখানে এলে তাঁরা তাঁকে গুলশানের ঠিকানা জানিয়ে দেন।
0 Comments