আশাশুনির সাইকেল মিস্ত্রী অনিমেষ হত্যা সাক্ষী বাবলু এখন আসামী, রিমান্ডে মালেক
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের লাঙলদাড়িয়া গ্রামের সাইকেল মিস্ত্রী অনিমেষ সরকার হত্যা মামলায় পুলিশ ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক মালেক মল্লিককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাতদিনের রিমান্ড আবেদনসহ সোমবার আদালতে পাঠিয়েছে। একইসাথে মামলার সাক্ষী বাবলু আক্তার মোল্লাকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দির জন্য পাঠানো হয়। আমলী ৮ নং আদালতের বিচারক মো. সালাহউদ্দিন আসামী মালেক মল্লিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একইভাবে সাক্ষী বাবুল আক্তার মোল্লার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড শেষে তাকে আসামী হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আসামী আব্দুল মালেক মল্লিক (৫৫) আশাশুনি উপজেলার লাঙ্গলদাড়িয়া গ্রামের ওমর ছিদ্দিক মল্লিকের ছেলে ও বাবুল আক্তার মোল্লা (৩৯) একই গ্রামের আব্দুল খালেক মোল্লার ছেলে। এদিকে বাবুল আক্তার মোল্লা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিলেও অনিমেষের মরদেহ ইমদাদুল হকের নিম গাছে ঝুলিয়ে রেখেছিল কারা তা জানা যায়নি। লাঙলদাড়িয়া গ্রামের বাবুল আক্তার মোল্লা সোমবার আদালতে ১৬৪ধারায় জবানবন্দির বরাত দিয়ে আদালত চত্বরে সাংবাদিকদের জানান, তাদের গ্রামের ওমর ছিদ্দিক মল্লিকের ছেলে আব্দুল মালেক মল্লিক, তার ভাই অহিদ মল্লিক ও একই গ্রামের মালেক মোল্লার ছেলে আলম মোল্লার সাথে তার দীর্ঘ দিনের সখ্যতা। ২৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে সাতটার দিকে স্থানীয় রব্বানির দোকানে তিনিসহ ওমর ছিদ্দিক মল্লিকের ছেলে অহিদ মল্লিক ও মালেক মোল্লার ছেলে আলম চা খাচ্ছিলেন। এ সময় অহিদ মল্লিকের বড় ভাই শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক মালেক মল্লিক মোবাইল ফোনে তাদের তিনজনকে তাদের বাড়িতে যেতে বলেন। সে অনুয়ায়ি রাত ৮টার দিকে তারা তিনজন মালেক মল্লিকের বাড়িতে যান। মালেক মল্লিক তাদেরকে ডেকে নিয়ে ঘরের পিছনে যান। সেখানে মালেক বলেন যে, তার দল বিএনপি এখন ক্ষমতায়। নিরঞ্জন সরকারের ছেলে অনিমেষের কথা সহ্য করা যাচ্ছে না। তাকে আজ রাতেই শেষ করে দিতে হবে। তিনি (বাবলু) রাজী না হওয়ায় মালেক মল্লিক তার হাতে থাকা দা তার (বাবলু) গলায় ধরেন। একপর্যায়ে তারা তিনজনসহ মালেক মল্লিক অনিমেষের ঘেরের পাশে একটি খেজুরগাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকেন। রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে ঘেরের পাশে আসা মাত্রই ইমদাদুলের সবজি ক্ষেতের পাশে অহিদ মল্লিক পিছন দিক থেকে অনিমেষকে জাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দেন। এ সময় আলম মোল্লা অনিমেষের দুই হাত চেপে ধরেন। অহিদ অনিমেষের গলায় দুই হাত চেপে ধরে মেরে ফেলে। এ সময় মালেক মল্লিক তার গলায় দা ধরে দাঁড়িয়েছিল। মালেক তাকে বলে যে, একথা কাউকে জানালে তার পরিস্থিতি (বাবলু) অনিমেষের মতো হবে। একপর্যায়ে তারা চারজন নাকতাড়া বাজারে জিল্লুর চায়ের দোকানে যেয়ে চা খান। সেখান থেকে তিনি বাড়ি ফিরে শুয়ে পড়লেও ঘুম আসছিলো না। একপর্যায়ে একটি ঘুমের বাড়ি খেয়ে তিনি আবারো শুয়ে পড়েন। ২৫জানুয়ারি সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি দেখতে পান ইমদাদুল হকের নিম গাছে নাইলনের দড়ি গলায় বেঁধে অনিমেষের লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া তার বাড়ির ছাদে অনিমেষের ব্যবহৃত একটি শট প্যান্ট, একটি লাইটার, মানিব্যাগসহ কিছু জিনিসপত্র ফেলে রাখা হয়েছে। নিম গাছে অনিমেষকে ঝুলিয়ে রাখা নাইলনের দড়িটি ছিলো আলম মোল্লার। তাকে ফাঁসানোর জন্য মালেক মল্লিক ও অহিদ মল্লিক পরিকল্পিতভাবে তার বাড়ির পাশে নিম গাছে অনিমেষের লাশ ঝুলিয়ে রাখে ও তার বাড়ির ছাদে অনিমেষের শট প্যান্ট, গ্যাস লাইটার, মানিব্যাগসহ কিছু জিনিসপত্র ফেলে রাখে। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপ-পরিদর্শক নাহিদ হোসেন জানান, শ্রীউলা ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক আব্দুল মালেক মোল্লাকে সাইকেল মিস্ত্রী অনিমেষ সরকার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হয়। বিচারক মো. সালাহউদ্দিন রিমা- শুনানী শেষে তাকে একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাকে সোমবার বিকেলে আদালত থেকে আশাশুনি থানায় আনা হয়েছে। আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন জানান, মামলায় ১নং সাক্ষী হিসেবে বাবুল আক্তার মোল্লার নাম থাকলেও জিজ্ঞাসাবাদে ও ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে প্রতীয়মান হয়। ফলে সোমবার বিকেলে ১৬৪ধারায় জবানবন্দি শেষে বাবুল আক্তারকে আদালত থেকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রসঙ্গত, জমির সীমানা নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে গত ২১ জানুয়ারি অনিমেষকে মারপিট করেন প্রতিবেশি অহিদ মল্লিক ও তার ভাই ইউনিয়ন বিএনপি’র আহবায়ক মালেক মল্লিক। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানানোয় গত ২৪ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টায় অহিদ মল্লিকের বাড়িতে এক শালিসি বৈঠক হয়। সেখানে শালিসদাররা শালিসের ভার মালেক মল্লিকের উপর চাপিয়ে দিয়ে তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেন। একপর্যায়ে অনিমেষের মুখে ঘুষি মেরে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দেন অহিদ মল্লিক। এরপর তার বোন তন্দ্রার হাতে থাকা অনিমেষের মোবাইল ফোনটি কেড়ে নিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর অনিমষেকে খুন করার হুমকি দেন মালেক ও অহিদ। বিকেলে অনিমেষ নিজের জীবন বাঁচাতে ঢাকায় কাজ করতে যাওয়ার কথা বলে মাকে। রাতে দোকান থেকে ঘের থেকে বাড়ি ফেরার সময় অনিমেষকে রাত ১০টার দিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যার প্রচার দেওয়া হয়। নিহতের মা শেফালী রানী সরকার ছেলেকে হত্যার ঘটনায় মালেক মল্লিক ও তার ভাই অহিদ মল্লিকের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজকে আসামী করে থানায় এজাহার দেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কথামত তা পরবর্তীতে পরিবর্তন করে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে এজাহার দেন তিনি। শনিবার সকাল ১১টায় নাকতাড়া কালিবাড়ি বাজার থেকে মালেক মল্লিক ও বিকেলে বাবুল আক্তার মোল্লাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
0 Comments