রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা নিয়ে বাইডেনের নীতি বদল: কেন ও কী প্রভাব

 রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা নিয়ে বাইডেনের নীতি বদল: কেন ও কী প্রভাব

 


যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবারের মতো রাশিয়ার ভূখণ্ডের গভীরে হামলার জন্য ইউক্রেনকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, এ অনুমতি অনুযায়ী ইউক্রেন এখন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (ATACMS) ব্যবহার করে রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা চালাতে পারবে।

কেন এই নীতি পরিবর্তন?

আগে ওয়াশিংটন এমন হামলার অনুমতি দিতে নারাজ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের আশঙ্কা ছিল, রাশিয়ার অভ্যন্তরে হামলা যুদ্ধ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। কিন্তু বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এমন এক সময়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যখন দুই মাস পর ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন। ট্রাম্প এর আগেই ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন।

এটিএসিএমএস ও যুদ্ধের পরিস্থিতি

ইউক্রেন দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়ার অধিকৃত এলাকাগুলোতে ATACMS ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে। তবে এবারই প্রথম রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডে এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি পেল তারা। এ মিসাইল ৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

বাইডেন প্রশাসনের নীতির পেছনে আরেকটি কারণ হতে পারে রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সামরিক সহযোগিতা। খবর এসেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের কুরস্ক অঞ্চলে উত্তর কোরিয়ার সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

কী প্রভাব ফেলবে?

কুরস্ক অঞ্চলে বর্তমানে ইউক্রেনের বাহিনী এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা দখলে রেখেছে। এখন তারা ওই অঞ্চলের চারপাশে রুশ সেনা, অবকাঠামো ও গোলাবারুদের মজুদে সরাসরি আঘাত হানতে পারবে। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, ATACMS সরবরাহ যুদ্ধের মোড় ঘোরাতে না পারলেও ইউক্রেনকে কৌশলগতভাবে এগিয়ে রাখবে।

এক পশ্চিমা কূটনীতিক বলেছেন, "এটি হয়তো যুদ্ধের নির্ণায়ক হবে না, তবে রাশিয়ার ব্যয় বাড়াবে এবং তাদের কৌশলে বাধা সৃষ্টি করবে।"

যুদ্ধের বিস্তৃতি ও ট্রাম্পের ভূমিকা

বাইডেন প্রশাসন এতদিন ধরে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা অনুমোদন দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। কারণ, এটি যুদ্ধকে আরও বিস্তৃত করতে পারে। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, রাশিয়ার অভ্যন্তরে পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহারকে ন্যাটোর সরাসরি অংশগ্রহণ হিসেবে গণ্য করা হবে।

জানুয়ারিতে ট্রাম্প ক্ষমতায় বসার পর এ নীতি বজায় থাকবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠরা এরই মধ্যে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার নীতির সমালোচনা করেছেন। তাঁর ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র বলেছেন, "শান্তি প্রতিষ্ঠার সুযোগ দেওয়ার আগেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।"

ইউক্রেনের সংসদ সদস্য ওলেক্সি গোনচারেঙ্কো বলেছেন, "আমরা উদ্বিগ্ন। আশা করছি, ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে এই সিদ্ধান্ত বদলাবেন না।"

শেষ কথা
বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করলেও এটি যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটাবে কি না, তা নিয়ে এখনও জল্পনা চলছে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অবস্থানও এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Post a Comment

0 Comments