আশাশুনির প্লাবিত মানুষ স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত, স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য বিভাগের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
জি এম মুজিবুর রহমান, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) : আশাশুনি উপজেলার ৩ ইউনিয়নের মানুষ প্রায় দেড় মাস বৃষ্টি ও নদী ভাঙ্গনের পানিতে হাবুডুবু খেয়ে বেঁচে আছে। পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ও সুপেয় পানির অভাবে এলাকার মানুষ বিপর্যস্থ হয়ে পড়লেও স্বাস্থ্য বিভাগের অনীহা ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৩ দিনের কার্যক্রমের পর থমকে যাওয়ায় চরম দুর্গতির সৃষ্টি হয়েছে।
প্রায় দেড় মাস উপজেলার কাদাকাটি, কুল্যা ও দরগাহপুর ইউনিয়নের মানুষ অতি বৃষ্টির কারনে জলমগ্ন ও পরবর্তীতে পার্শবর্তী উপজেলা থেকে তেড়ে আসা পানিতে প্লাবিত হয়ে বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। এলকার অধিকাংশ ঘরবাড়ি প্লাবিত, ৩ হাজার পরিবারের প্রায় ১২ সহস্রাধিক মানুষ জলমগ্ন, ৫৬০ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান এবং ৬০০০ মে.টন বাগদা চিংড়ী ও সাদা মাছ ভেসে গেছে। পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ও অন্যান্য রোগের প্রকোপে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। বাড়ি থেকে বা এক স্থান থেকে অন্যস্থানে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়ার সক্ষমতা ও সুযোগের অভাবে সবাই হতাশ হয়ে পড়েছে। রান্না করার কোন সুযোগ নেই অদিকাংশ মানুষের। খাবার যোগাড় করাও কঠিন। হাটু পানি, গলা পানিতে চলাচল করা সহজ কাজ নয়। কিন্তু তারপরও সরকারি ভাবে তেমন কোন সহযোগিতা তাদের কাছে পৌছাচ্ছেনা। উপজেলা পরিষদ থেকে যৎসামান্য ত্রাণ সামগ্রী কয়েকদিন পেয়েছেন কেউ কেউ। যা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য।
চিকিৎসার জন্য কোন পদক্ষেপ দীর্ঘ দেড় মাসে নজরে আসেনি বলে এলাকাবাসী জানান।
এপর্যন্ত একদিনো কোন মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়নি সেখানে। স্থানীয় সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, মেম্বার উত্তম কুমার ও মাস্টার একরামুর জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকলাপনা কর্মকর্তা উম্মে ফারহানার সাথে যোগাযোগ করা হলে গত শুক্রবার ইউনিয়নের কাদাকাটি বাজার, যদুয়ারডাঙ্গা ও হলদেপোতায় ক্যাম্প পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানিয়ে মাইকিং করতে বললে মাইকিং করা হয়। কিন্তু হাসপাতাল থেকে কোন চিকিৎসক না যাওয়ায় আগত রোগিরা হতাশ হয়ে ফিরে যায়। এরপর স্বস্থ্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে পরে আবার ক্যাম্প বসবে বলে ওয়াদা করেন, কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খোজ পাওয়া যায়নি। দীর্ঘ দেড় মাসে চিকিৎসা না পাওয়া মানুষেরা চরম বিপত্তির মধ্যে রয়েছে।
অপরদিকে সুপেয় পানির অভাক প্রকট হওয়ার পরও খোজ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এগিয়ে যায়নি। সবশেষ গত সপ্তাহে ৩ দিন ৩ স্পটে ৩০০০ লিটার করে পানি বিতরন করা হয়। ১২০০০ মানুষের জন্য ৩০০০ লিটার পানি অপ্রতুলি ছিল। তাও মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছিল। কিন্তু এরপর থেকে তারাও উধাও। ফলে এলাকাবাসী সুপেয় পানির অভাবে যেনতেন পানি পান করতে বাধ্য হচ্ছে।
কাদাকাটি ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের একরামুল হক জানান, গত শুক্রবারের দিন আশাশুনি উপজেলা থেকে মেডিকেল টীম আসার কথা ছিল কিন্তু আমরা মাইকিং করার পরেও মেডিকেল টিম এলাকায় আসেনি।পরের দিন আসার কথা তাও আসে নাই। আমাদের এলাকায় বন্যা প্লাবিত হওয়ায় বহু লোকের হাত-পা খাওয়া ও বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়েছে। আজ পর্যন্ত কোন মেডিকেল টিম উপজেলা থেকে আসে নাই। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
আব্দুল মজিদ জানান, গত কয়েকদিন মেডিকেল টিম আসার কথা থাকলেও কোনদিন মেডিকেল টিম আসেনি। আমরা বহু অসুবিধায় পড়ে আছি। একেতো খাদ্য খাবার নেই তারপরে ওষুধ পানির কোন ব্যবস্থা নেই। আমরা খুব কষ্টে আছি।
কাদাকাটি এক নং ওয়ার্ডের সাহেব আলী জানান, আমাদের এলাকা প্লাবিত হওয়ার পর সরকারি কোনো ওষুধপত্র আমরা কোনদিন পাইনি। গত কয়েকদিন আগে মাইকিং করে এসেছিল কিন্তু মাইকিং করার পরেও মেডিকেল টিম আসেনি।
আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ উম্মে ফারহানা বলেন, আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে তারা কাজ করছে। আমি ব্যস্ততার জন্য সেখানে যেতে পারিনি। দীর্ঘ দেড়মাস চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত পানিবন্দি মানুষের পাশে একদিনও কেন যাননি? এমন প্রশ্নের কোন সদোত্তর তিনি দিতে পারেননি।
0 Comments