টেস্টের খরচ মেটাতে নিঃস্ব রোগী
দীর্ঘদিন ধরে পিঠের ব্যথায় ভুগছিলেনফেরদৌসী বেগম (৪৮) । পরিস্থিতি খারাপ হলে গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে বেসরকারি ক্লিনিকে এক চিকিৎসকের কাছে যান। চিকিৎসক বেশ কয়েকটি টেস্ট এবং এক্স-রে করাতে বলেন। বিল পরিশোধের সময় দেখা যায়, পায়ের হাঁটুর হাড়ের এক্স-রে করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফেরদৌসী বেগম বিষয়টি নিয়ে চিকিৎসকের কাছে প্রশ্ন করলে তিনি বিরক্ত হয়ে বলেন, "চিকিৎসক কে, আপনি না আমি?" তিনি আর কোনো ব্যাখ্যা না দিয়ে সব টেস্ট করানোর নির্দেশ দেন এবং অন্য রোগীদের সামনে ফেরদৌসী বেগমকে অপমান করেন। এতে কষ্ট পেয়ে ফেরদৌসী বেগম টেস্ট না করিয়ে ফিরে আসেন এবং পরে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করান, যেখানে তাঁকে আন্তরিকভাবে তিনটি টেস্টের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
চিকিৎসা ও রোগীর অধিকার
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, একজন চিকিৎসককে রোগীর জন্য টেস্ট ও ওষুধের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে হবে। ১৯৪৮ সালের জেনেভা ডিক্লারেশন অনুযায়ী, চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে একটি অলিখিত চুক্তি হয় যেখানে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও মানবিক আচরণের গুরুত্ব রয়েছে। রোগীদের অভিযোগ রয়েছে যে, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা, ওষুধ বা অপারেশনের ব্যাখ্যা ঠিকমতো দেওয়া হয় না এবং অনেক চিকিৎসক রোগীর সমস্যা শুনে দ্রুত প্রেসক্রিপশন দিয়ে দেন।
স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় এবং সংকট
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (বিআইডিএস) এর গবেষণা অনুযায়ী, ২০২২ সালে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ৬১ লাখ বাংলাদেশি দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, অনেক পরিবার তাদের মোট খরচের ১০ শতাংশের বেশি ব্যয় করে স্বাস্থ্যসেবায়, যা ওষুধ, টেস্টসহ অন্যান্য খরচে ব্যয় হয়।
আছিয়া খাতুন নামের এক রোগী তাঁর মায়ের জরায়ুর টিউমার অপারেশন করানোর জন্য ঢাকায় আসেন এবং বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছ থেকে ভিন্ন পরামর্শ পান। এসময় তাঁকে বারবার টেস্ট করানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়, যার খরচ প্রায় ১০ হাজার টাকা।
স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, দেশে চিকিৎসা খরচ বেশি এবং রোগীরা দুর্ভোগে পড়েন। বেসরকারি হাসপাতালের সেবার দাম ও মান নির্ধারণ করে টানিয়ে রাখতে হবে এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের জন্য নির্ধারিত দামের গাইডলাইন তৈরি করতে হবে। সরকারি হাসপাতালের সেবার মানও উন্নত করতে হবে।
0 Comments