দ্বিতীয় চাঁদ পেতে যাচ্ছে পৃথিবী

সেই আদিকাল থেকেই পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। রাতের আকাশে তাকালেই আমরা তাকে দেখতে পাই। তবে এবার পৃথিবী পেতে যাচ্ছে আরও একটি সঙ্গী। যদিও এটি সাময়িক, কিছুদিনের জন্য পৃথিবীর দুটি উপগ্রহ থাকবে।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা একটি ছোট মহাকাশ শিলা শনাক্ত করেছেন, যার দৈর্ঘ্য মাত্র ৩৩ ফুট। এই শিলাটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে আটকা পড়ে সাময়িকভাবে পৃথিবীর নতুন উপগ্রহ হিসেবে প্রদক্ষিণ করতে চলেছে। ‘২০২৪ পিটি৫’ নামের এই গ্রহাণুটি এই শরতে পৃথিবীর নতুন চাঁদ হিসেবে দেখা দেবে এবং অল্প কিছুদিন আমাদের উপগ্রহ হবে।

রিসার্চ নোটস অব দ্য আমেরিকান অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ পিটি৫ আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২৫ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে। এরপর এটি মহাকাশের অন্য দিকে যাত্রা করবে। এই সময়ে এটি পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ বলয়ে আটকে থাকবে, ফলে এটি সাময়িকভাবে পৃথিবীর দ্বিতীয় চাঁদ হিসেবে পরিচিত হবে।

হার্ভার্ডের গবেষক ফেদেরিকা স্পোটো বলেন, "এটি একটি চমকপ্রদ ঘটনা।" তিনি উল্লেখ করেন, এই ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা মহাকাশের অন্য বস্তু সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাবেন এবং পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা বিপজ্জনক গ্রহাণুগুলো শনাক্তের পদ্ধতি উন্নত করতে পারবেন।

মিনি-মুন বা ছোট চাঁদগুলো সাধারণত তাদের আকার এবং অল্প সময়ের জন্য উপস্থিতির কারণে পর্যবেক্ষণ করা কঠিন। অনেক সময় কৃত্রিম বস্তু, যেমন স্যাটেলাইটকেও ভুল করে চাঁদ মনে করা হয়। ২০১৫ সালে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার গাইয়া স্যাটেলাইটকে দ্বিতীয় চাঁদ হিসেবে ভুল করা হয়েছিল। তবে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত, ২০২৪ পিটি৫ একটি প্রাকৃতিক বস্তু এবং এটি মহাকাশের ধ্বংসাবশেষ নয়।

কাম্পলুটেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং গবেষণার সহ-লেখক রাউল দে লা ফুয়েন্তে মার্কোস উল্লেখ করেন, "যদিও এটি একটি প্রাকৃতিক বস্তু, এর উৎস রহস্যময়।" কিছু বিশেষজ্ঞের মতে, ২০২৪ পিটি৫ হতে পারে চাঁদেরই একটি বিচ্ছিন্ন অংশ, যা এই ঘটনার রহস্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

এ ঘটনা কেবল একটি আকর্ষণীয় মহাজাগতিক ঘটনা নয়, বরং মিনি-মুনগুলোতে মূল্যবান উপাদান থাকতে পারে, যা ভবিষ্যতে মহাকাশ খনির মাধ্যমে সংগ্রহ করা যেতে পারে।

যদিও এই গ্রহাণু অল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে, এটি আবার ২০৫৫ সালে পৃথিবীর কাছ দিয়ে অতিক্রম করবে। এটি আমাদের মহাকাশের রহস্যময় এবং পরিবর্তনশীল প্রকৃতির একটি নিদর্শন।

Post a Comment

0 Comments